মেয়ের আবদারে বাবা নিজেই বানালেন জিপ

Passenger Voice    |    ০৫:১৬ পিএম, ২০২২-০৩-১৪


মেয়ের আবদারে বাবা নিজেই বানালেন জিপ

কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ ছাড়াই একটি জিপ গাড়ি তৈরি করে স্থানীয়ভাবে আলোচনায় এসেছেন নরসিংদীর পলাশের কাউসার আহমেদ নামে এক যুবক। তিনি এটির নাম দিয়েছেন ‘শখের জিপ’। গাড়িটি তৈরি করতে সময় লেগেছে এক মাস। গাড়িটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে মাত্র আড়াই লাখ টাকা ।

কাউসার আহমেদ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌরসভার বাঙ্গালপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তবে তার জন্ম কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে। গত পাঁচ বছর যাবত তিনি পরিবার নিয়ে বাঙ্গালপাড়া এলাকায় বসবাস করছেন। 

জানা গেছে, কাউসার আহমেদের জন্ম ১৯৮৮ সালে। ২০০৩ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের স্থানীয় একটি মাদরাসা থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে আর পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে পাড়ি জমান সৌদি আরব। প্রায় এক যুগ প্রবাস জীবন কাটিয়ে ছয় বছর আগে দেশে ফেরেন কাউসার। পরে পলাশের ঘোড়াশালে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় মাস দুয়েক আগে তার মেয়ে রাদিয়া ইসলাম ইউটিউবে বাচ্চাদের খেলনা একটি জিপ দেখে আবদার করে বসেন তারও এমন জিপ চাই, যেটাতে সে চড়তে পারবে।

তবে ওই রকম গাড়ি মার্কেট থেকে কেনার সামর্থ্য নেই কাউসারের। চিন্তা করেন মেয়ের জন্য এক সিটের ব্যাটারিচালিত গাড়ি বানাবেন। সেই থেকে পরিকল্পনা শুরু। পরিকল্পনা থেমে যায় তখন যখন বুঝতে পারেন এক সিটের ছোট গাড়ি তৈরিতেই খরচ হবে প্রায় দেড় লাখ টাকা। পরে পরিকল্পনা করে সাহসী উদ্যোগ নেন। এক সিট নয়, সামনে পেছনে মিলিয়ে মোট পাঁচ সিটের গাড়ি বানাবেন তিনি। খরচ পড়বে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। যেই ভাবা সেই কাজ। স্থানীয় এক অটো গ্যারেজের মিস্ত্রিকে সঙ্গে নিয়ে নিজস্ব নকশা ও পরিকল্পনায় প্রায় এক মাসে তৈরি করেন শখের জিপ। যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য ব্যয়সহ মোট খরচ পড়ে আড়াই লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে মেয়ে রাদিয়া ইসলামকে পাশে বসিয়েই চালকের আসনে বাবা কাউসার আহমেদ বসে গাড়িটি উদ্বোধন করেন। 

কাউসার আহমেদ বলেন, আমার মেয়েকে ইউটিউবে দেখা জাপানি ছোট জিপ কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার ছিল না। তাই মেয়ের শখ পূরণ করতে একমাসের পরিশ্রমে আমি এই গাড়ি তৈরি করেছি। 

তিনি বলে, মনে মনে সব সময়ই উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা ছিল। সৃজনশীলতা কাজ করতো। যার ফলে গাড়ি তৈরি শুরু করার সময় বেসরকারি কোম্পানির ওই চাকরি ছেড়ে দেই। মনেপ্রাণে এক মাস কাজ করে আমি সফলতা পেয়েছি। ২০ মণ  ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই গাড়িটি বর্তমানে ৬০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। ৪০ টাকা বিদ্যুৎ খরচে এটি যায় ১৩০ কিলোমিটার। আমি এটা নিয়ে আরও কাজ করতে চাই। বাণিজ্যিকভাবে কাজ করা গেলে আড়াই লাখ টাকার এই গাড়ি আমি দুই লাখ টাকায় বানিয়ে দিতে পারব। আমি কাজের সুযোগ চাই।

কাউসার আহমেদের মেয়ে রাদিয়া ইসলাম বলেন , ইউটিউবে ভিডিও দেখে বাবাকে আমি ছোট জিপ গাড়ির কথা বলি। তারপর বাবা এই গাড়ি বানায়। এখন বাবা আমাকে গাড়িতে চড়িয়ে ঘুরতে নিয়ে যায়। আমার অনেক ভালো লাগে।

ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র আল মুজাহিদ তুষার বলেন, কাউসারের সৃজনশীলতাকে আমি সম্মান জানাই। আমি নিজেও গাড়িটিতে চড়েছি। তিনি যদি বাণিজ্যিক আকারে কাজ করতে চান তাকে আমরা পৌরসভা থেকে যথাযথ সহযোগিতা করব। বিভিন্ন গাড়ি তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব আমি। বাণিজ্যিকভাবে কাজ করতে চাইলে আমি তার পাশে থাকব।